Posts

পর্ব ০৮

  আলো ফোটার পূর্বে নিদ্রা ত্যাগ করে চার মা-মেয়ে একসাথে নামায পড়ল। এরপর বারান্দায় শীতল পাটি বিছিয়ে তিন বোন পড়তে বসল। রাতভর ঝমঝম করে বৃষ্টি হয়েছে৷ বর্ষা স্নানে স্নিগ্ধ প্রকৃতি। মায়াবী সকাল। এমন সকালে কেউ ঘুমাতে চায়। আর কেউ বা বই পড়তে পছন্দ করে। অথবা,পছন্দের অন্য যেকোনো কাজ করে। পূর্ণার ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। পড়া একদমই সহ্য হচ্ছে না। পড়া থেকে উঠেই সে মনোবাসনা পূর্ণ করতে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। সাথে সাথে ঘুমে হারাল। পদ্মজা অনেক ডাকল, উঠল না। এদিকে স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে। হেমলতা বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে প্রশ্ন করলেন, 'পূর্ণা ঘুমে?' 'জ্বি,আম্মা।' 'সে জানে না স্কুল আছে। তবুও কোন আক্কেলে ঘুমাল।' মায়ের কঠিন স্বরে পদ্মজা ভয় পেল। পূর্ণা নির্ঘাত মার খাবে আজ। সে হেমলতাকে আশ্বস্ত করে বলল, 'তুমি যাও আম্মা। পূর্ণা কিছুক্ষণের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।' হেমলতা জানেন, পূর্ণা এতো সহজে ঘুম থেকে উঠবে না। অহরহ এমন হয়ে আসছে। যতই আদর করে ডাকা হোক না কেন, বৃষ্টিমাখা সকালে তার ঘুম ছুটানো যায় না। বাঁশের কঞ্চি পূর্ণা খুব ভয় পায়। কঞ্চির বারি না খাওয়া অবধি ঘুম পূর্ণাকে কিছুতেই ছাড়বে না। এ যেন ভূত ছ...

পর্ব ০৭

Image
  হেমলতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে দুই মেয়েকে দেখেন। তিনটা ছিদ্র দেখেন। এরপর দৃষ্টি শীতল করে বললেন, 'শুটিং দেখছিলি?' পদ্মজা বাধ্যের মতো মাথা ঝাঁকাল। হেমলতার রাগ হলো না। তিনি চৌকিতে বসে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,'ছিদ্রের বুদ্ধি পূর্ণার?' প্রশ্নটা শুনে পূর্ণার গলা শুকিয়ে আসল। এক ফোঁটা পানি দরকার। নয়তো দম বেরিয়ে যাবে। পদ্মজা চকিতে চোখ তুলে তাকাল। অসহায় কণ্ঠে বলল, 'আম্মা, আর হবে না। পূর্ণাকে কিছু বলো না। ওর দোষ নাই,আমি... " হেমলতা পদ্মজাকে কথা শেষ করতে দিলেন না। প্রেমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'প্রেমা, তোর আব্বা কই?' 'উঠানে।' 'গিয়ে বল,আমি ডাকছি।' প্রেমা ছুটে গেল। আবার ছুটে আসল। হেমলতা বারান্দা পার হয়ে চুলার দিকে এগোলেন। তখন মোর্শের আসলেন। 'কি হইছে? ডাক কেরে?' 'লাহাড়ি ঘরে একটা জানালা করে দাও। মেয়েদের চৌকির পাশে। কাঠ আছে মুরগির খোপের কাছে। ' 'কী জন্যে?' 'আমি চাইছি, তাই। না পারলে বল। অন্য কাউকে ডাকব।' 'ত্যাড়া কথা কওন ছাড়।' 'আমার তোমার সাথে ভালো করে কথা বলতে ভালো লাগে না।' 'লাগব কেরে? তোমার তো আমারে পছন্দ না। তোম...

পর্ব ০৬

Image
  রাতে ঝড় এসেছিল। লাহাড়ি ঘরের পিছনে তৈরি পথ বন্ধ হয়ে গেছে গাছের ভাঙা ডালপালা দিয়ে। মোর্শেদ রাতে বাড়ি ফেরেননি। হেমলতার একার পক্ষে সম্ভব নয় পথ খালি করার। তাই পদ্মজা, পূর্ণা স্কুল থেকে বাড়ির সামনে দিয়ে ফিরছিল। উঠোনে শুটিং দলের সবাই ছিল। পদ্মজা মাথা নত হয়ে থেমে থেমে কাঁপতে থাকে। পথ শেষই হচ্ছে না। মাথায় ঘোমটা টানা। অনেকের নজরে পদ্মজা চলে আসল। মিলন নামে একজন পূর্ণাকে ডাকল, 'এই পূর্ণা?' পূর্ণা দাঁড়াল, সাথে পদ্মজা। পদ্মজা শুটিং দলটার দিকে তাকাচ্ছে না। মিলন পদ্মজার দিকে চোখ স্থির রেখে পূর্ণাকে প্রশ্ন করল, 'পাশের মেয়েটা কে? প্রথম দেখছি।' 'আমার বড় আপা।' 'আপন?' মিলন ভারী আশ্চর্য হয়ে বলল। দশ দিন হলো এখানে আসার। কখনো পূর্ণা,প্রেমা ছাড়া কোনো মেয়েকে চোখে পড়ল না। কণ্ঠও শোনা যায়নি। তাই বড় বোন বলাতে সে খুব অবাক হলো। পূর্ণা হেসে বলল, 'হুম। আপন।' মিলন বিড়বিড় করে বলল, 'চেহারার তো মিল নেই।' 'সবাই বলে।' 'আচ্ছা,যাও।' দু'বোন লাহাড়ি ঘরে চলে আসল। পদ্মজা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ভেতরটা এতো কাঁপছিল। অনেক মানুষের পা দেখেছে, চোখ তুলে মানুষগুলোর মুখ দেখার সা...

পর্ব ০৫

  লাহাড়ি ঘর দু'ভাগ করা হয়েছে চাদর টানিয়ে। একপাশের চৌকিতে হেমলতা এবং মোর্শেদ থাকেন। অন্যপাশের চৌকি পদ্মজা,পূর্ণা ও প্রেমার দখলে। লাহাড়ি ঘরের পিছনের দরজা আপাতত প্রধান দরজা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পিছনে অনেক কচু গাছ ছিল। হেমলতা মোর্শেদকে নিয়ে জায়গা খালি করেছেন। এরপর সেখানে মাটির চুলা তৈরি করা হয়েছে। বড় সড়কে উঠার জন্য ঝোপঝাড় কেটে সরু করে পথ করা হয়েছে। এতে মোর্শেদের সাহায্য ছিল না। হেমলতা দুই মেয়েকে নিয়ে একাই করেছেন। শুটিং দলে অনেক পুরুষ। পদ্মজাকে ভুলেও তাদের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করতে দেওয়া যাবে না । হেমলতার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, পদ্মজার মুখ পুড়িয়ে দিতে। পরক্ষণেই নিজের উপর ঘৃণা চলে আসে। কী করে নিজের মেয়ের প্রতি এমন মনোভাব আসতে পারে? অথচ,পদ্মজার হাতে সূচ ফুটলে হেমলতার মনে হয় নিজের শরীরে আঘাত লেগেছে। কী জন্য এতো টান পদ্মজার প্রতি? ভেতরে ভেতরে হেমলতা এই প্রশ্নের উত্তর জানেন। শুধু প্রকাশ পায় না। না জানার ভান ধরে থাকেন। ' আম্মা? আজ আমি রাঁধি?' পদ্মজার প্রতিদিনের প্রশ্ন! হেমলতা রাঁধতে দিবেন না জানা সত্ত্বেও পদ্মজা প্রতিদিন অনুরোধ করে। হেমলতা বিপদ-আপদ ছাড়া পদ্মজাকে রান্নাঘরে পাঠান না। স...